Algerian Embassy

سفارة الجزائر ، دكا

আলজেরিয়া দূতাবাস, ঢাকা

Embassy of Algeria, Dhaka

Ambassade d'Algérie, Dhaka

অ্যালিজার্স-প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএন) এক বক্তব্য দেন।

ইউএন জিএর সাধারণ অধিবেশন: রাষ্ট্রপতি টেবউনের বক্তৃতা

 

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি,

সাধারণ পরিষদের সম্মানিত সভাপতি,

সম্মানিত মহাসচিব,

মহামহিম, মহাত্মন, ভদ্রমহিলা মহোদয়গণ, রাষ্ট্রপ্রধান সরকারপ্রধানগণ,

এই মহান সমাবেশে নতুন আলজেরিয়ার পক্ষে বক্তব্য প্রদানের বিরল সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে আলজেরিয়ার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আলজেরিয়ার জনগণ ন্যায় বিচার ও গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংরক্ষনে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

প্রথমেই আমি ৭৫ তম সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি জনাব ভোলকান বোজকিরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ও সাফল্য কামনা করছি। বিদায়ী সভাপতি জনাব তিজ্জানী মুহাম্মেদ বান্দে পূর্ববর্তী অধিবেশন দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন, তাকেও আমি আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। জাতিসংঘের মহাসচিব জনাব, আন্তনিউ গুতেরেসকে তার প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

ভয়াবহ মানব বিপর্যয়ের পর আমাদের সংস্থার উত্থান, আমাদের দায়িত্ব/কর্তব্য ও ভূমিকার বিশ্লেষণে সফলতা ও ব্যার্থতার চিত্র ফুটে ওঠে। ক্রমবর্ধমান বহুবিধ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের অনেক কাজই বাধার সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন ক্লজ হতে এই সব চ্যালেঞ্জের উদ্ভব, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের কাজের ক্ষেত্রে এমনটি বিরাজমান।

জনাব সভাপতি,

আমরা শক্তিশালী জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করি। জাতিসংঘের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও ফলপ্রসু করার লক্ষে এই সংস্থার ব্যাপক ও ক্রমাগত সংস্কার প্রয়োজন। সির্ত ঘোষণা অনুযায়ী এ বিষয়ে আলজেরিয়া আফ্রিকান ইউনিয়নের(AU) অবস্থানের সঙ্গে সৌহার্দ্য প্রকাশ করছে। নিরাপত্তা পরিষদে সমমর্যাদায় প্রতিনিধিত্ব, সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশয়ে আন্তসরকার আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। দ্রুত ফলাফল প্রত্যাশায় এ আলোচনা অপরিহার্য।

আটান্ন বছর আগে আমাদের দেশ জাতিসংঘের সদস্য হয়েছে। সেই থেকে আমরা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে চলেছি। আমাদের বৈদেশিক নীতির মূলে রয়েছে দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান, অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশে দেশে সৌহার্দ্য, ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা। আমাদের বৈদেশিক নীতি অনেক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পলন করেছে, সে কারনে আমরা গর্বিত। এই সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের কূতনীতিকরা সব সময় কাজ করছে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যেও আলজেরিয় কূটনীতিকরা পরিশ্রম করছে।

এই নীতির আলোকে লিবিয়ার বিবাদমান গোত্রগুলিকে পুনর্মিলনের জন্য আলজেরিয়া কাজ করছে। বিবাদমান দলগুলিকে আমরা বিদেশি প্রভাব মুক্ত হয়ে, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘঠিয়ে জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছি। বিদেশি সহযোগিতা দেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে পারে মর্মেও বুঝিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ের দুইটি যুদ্ধ বিরতিকে আলজেরিয়া স্বাগত জানিয়েছে এবং পক্ষগুলিকে অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বিরতিকে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

আমরা ভাতৃপ্রতিম পার্শ্ববর্তী দেশ মালির নাজুক পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। আমরা মনে করি সম্মতির ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাংবিধানিক পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন হবে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের বিষয়ে মালির জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।

আমরা মনে করি, আলজেরিয়ার উদ্যোগের ফলে সম্পাদিত শান্তি ও জাতীয় পুনর্মিলনী চুক্তি হচ্ছে যথার্থ কাঠামো, যার আওতায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে ভাতৃপ্রতিম মালি রাজনৈতিক সুশাসন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হবে।

ফিলিস্তিনের বিষয়টি আলজেরিয়ার জনগণের কাছে শুধু পবিত্রই নয়, এটি আলজেরিয়ার মূল বিষয়গুলির একটি। ফিলিস্তিনি জনগণের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য্য অধিকারের প্রতি আমরা আমাদের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। স্বাধীন সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের রাজধানী হবে আল-কুদস। আমরা বিশ্বাস করি এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে স্থিতিশীল করার মূল চাবিকাঠি।

আমরা পশ্চিম সাহারায় শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল অন্তরায়সমূহ, বিশেষ করে বিবাদমান পক্ষ দুটির আলোচনা বন্ধের কারণ অনুসন্ধান করেছি। পশ্চিম সাহারার জন্য জাতিসংঘের নতুন বিশেষ দূত নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। আলজেরিয়া এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে, বিশেষ করে পশ্চিম সাহারার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রন সংশ্লিষ্ট গনভোট আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছে, বিষয়টি গত ঊনত্রিশ বছর ধরে ক্রমাগত স্থগিত রাখা হয়েছে। পশ্চিম আরব ও আফ্রিকার জনগণের উন্নয়ন ও সংহতির আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের মহাসচিবের দূত নিয়োগ করা ও বিবাদমান পক্ষসমূহের মাঝে আলোচনা ত্বরান্বিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

জনাব সভাপতি,

সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ দমনের লক্ষ্যে আলজেরিয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমগ্র বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ বিশাল হুমকি স্বরূপ। আমরা দুর্নীতি ও অর্থপাচার বন্ধের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছি। এতদ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে, চুরি যাওয়া অর্থ চুক্তি অনুযায়ী জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে আমার দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। সে কারণে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রের বিস্তার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত সকল আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে আমরা সক্রিয় ভাবে জড়িত।

ঔপনিবেশিক আমলের পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষতিকর প্রভাব আমরা এখনো বহণ করছি। আমাদের দৃড় বিশ্বাস মানব সভ্যতা ধ্বংসের হুমকি থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস সাধন।

পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর আলজেরিয়া বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। সংশিষ্ট চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ ও কার্যকলাপে আমরা পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনছি।

আমরা উন্নত বিশ্বের প্রতি এই মর্মে পুনঃআহ্বান জানাতে চাই যে, ঐতিহাসিক কারণে তাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলির পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিপদ ও হুমকি মোকাবেলার লক্ষ্যে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা।

জনাব সভাপতি,

আলজেরীয় মহিলারা জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, সন্ত্রাস দমনে যুদ্ধ করেছে, এখন তারা জাতি গঠনেও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের এই ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। আলজেরিয় মহিলাদের এই ভূমিকা লালন ও উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে। জনজীবনে যুবকদের অংশগ্রহণুকেও গুরুত্ব সহকার বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ুন কষ্টসাদ্ধ হলেও টেকসই উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জনের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়নি। আমরা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি নিরূপনের সূচক নির্ধারন সংক্রান্ত জাতীয় কাঠামো প্রস্তুতের কাজ করছি। আমরা টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডাকে অচিরেই বার্ষিক বাজেটিং কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করবো। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে আমরা একটি আইনী কাঠামো প্রস্তুত করছি।

জনাব সভাপতি,

আলজেরিয়া আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায় বিচারসহ গণতন্ত্রের স্তম্ভসমূহ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গুণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আলজেরীয় জনগণের সার্বভৌমত্ব, পছন্দ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা পুনরায় নিশ্চিত হয়েছে।

গত কয়েক মাসে স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করা সত্ত্বেও নতুন, শক্তিশালী, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আলজেরিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে সংস্কার সাধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী নভেম্বরে সংবিধান সংশোধনের খসড়ার উপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রীক ও রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার ভিত সৃজনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষন এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের তারিখটি দারুণ প্রতীকি, আমাদের স্বাধীনতার জন্য শাহাদত বরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে তারিখটি নির্ধারিত, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মুক্ত স্বাধীন আলজেরিয়ায় বসবাস করছি।

জনাব সভাপতি,

সবশেষে আমরা ঐক্য ও সংহতির আবেদন জানাতে চাই। বিশ্বে বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলাপূর্বক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও তার জনগণকে ঝুকি হতে উদ্ধার করে শান্তি, নিরাপুত্তা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভেদ ভুলে একত্রে এগিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য্য ধরে আমার কথা শুনার জন্য আপনাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ।”

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।